স্বল্পসাক্ষরতার অভিশাপ বাংলাদেশ থেকে অচিরে মোচন হবার নয়। অথচ সমগ্র গণমানুষকে বাংলা সাহিত্যের জীবনপ্রদায়ী নিষেকের ভিতরে না আনলে, এক মান বাংলা ভাষা ব্যবহারের ক্ষমতার মধ্যে না আনলে বাঙালির সাংস্কৃতিক বিকাশ তথা তাবৎ ঐহিক বিকাশ ও জাতি হিসেবেই বাঙালির অস্তিত্ব নিতান্ত অসম্ভব হয়ে পড়বে। এই সঙ্কট মোচনের এক পথ কথকথার এই দেশে, পুঁথি, জারী, কীর্তন, পালাগানের মধ্য দিয়ে জনশিক্ষা সম্প্রচারের এই দেশে আবৃত্তি, নাটক, কথকথা প্রভৃতির মধ্য দিয়ে সাহিত্যের বাচিক প্রসারের আন্দোলন গড়ে তোলা। এই হচ্ছে কণ্ঠশীলন প্রতিষ্ঠানের প্রথম এবং প্রধান উদ্দেশ্য। এই উদ্দেশ্যকে অবলম্বন করে যাঁরা সকলের কর্মে-বচনে জীবনে যাতে কোন ফাঁক কিংবা ফাঁকি না থাকে এবং তাঁরা যাতে সঙ্ঘবদ্ধ অনুশীলনের দ্বারা জীবনকে যথা-অবহিত বুদ্ধিদীপ্ত রসগ্রহণক্ষম জীবন ও জগৎ জিজ্ঞাসায় সদা আন্দোলিত, শিল্প ও সমাজে দায়বদ্ধ এক গভীর ও তাৎপর্যপূর্ণ সত্য ও সুন্দর নিরবচ্ছিন্ন অস্তিত্ব হিসেবে গড়ে তুলতে পারেন তার আয়োজন ও ব্যবস্থাপন গড়ে তোলা এই প্রতিষ্ঠানের সকল প্রয়াসের দ্বিতীয় লক্ষ্য। ‘বিশ্বমানব হবি যদি কায়মনে বাঙালি-হ’ এই থাকবে এ প্রতিষ্ঠানের সকল উদযোগের মূলে – যে বাঙালি মানবতাকে সকল জাতি ধর্ম স্বার্থ উন্নতি ও প্রতাপ-প্রভাবের উর্ধ্বে স্থান দেয়, যে বাঙালি বিশ্বমানবতার পথে প্রথম চরণপাতে স্বদেশীয় ভিন্ন সংস্কৃতির সকল মানুষকে আপন বলে জানে, তাঁদের সাংস্কৃতিক ঐহিক সকল সত্যকে সশ্রদ্ধ বিনম্রতায় মানে।